মোঃ ইব্রাহিম খলিল
পেন্টাগন নতুন নিয়ম জারি করেছে, যার ফলে সামরিক সদর দপ্তরে কাজ করা সাংবাদিকদের এমন তথ্য প্রকাশ না করার জন্য একটি চুক্তিতে সই করতে হবে, যা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া প্রকাশের জন্য উপযুক্ত নয়—এমনকি তথ্যটি গোপনীয় না হলেও।
শুক্রবার প্রকাশিত ১৭ পৃষ্ঠার একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যে সাংবাদিকরা এই নীতি মানবেন না, তারা পেন্টাগনে প্রবেশের অনুমতি হারাতে পারেন। এই নিয়ম রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় থেকে চলে আসা মিডিয়া নিয়ন্ত্রণকে আরও কঠোর করেছে। নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা আছে, “কোনো তথ্য প্রকাশের আগে, তা অশ্রেণীবদ্ধ হলেও, সঠিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।” এই নিয়মের সঙ্গে একটি ফর্মও দেওয়া হয়েছে, যেখানে পেন্টাগনে প্রবেশাধিকারপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের জন্য নিরাপত্তা নির্দেশনার বিস্তারিত তালিকা রয়েছে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে যারা কথা বলেন, তারা এই নিয়মকে স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর হামলা হিসেবে দেখছেন। ট্রাম্প যখন আমেরিকার মিডিয়া ব্যবস্থাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হুমকি, মামলা এবং সরকারি চাপ বাড়াচ্ছেন, তখন পেন্টাগনের এই নতুন নিয়ম এসেছে।
ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাইক বালসামো, যিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের জাতীয় আইন প্রয়োগকারী সম্পাদক, বলেছেন, “যদি সামরিক বাহিনী সম্পর্কে খবর প্রকাশের আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়, তাহলে জনগণ আর স্বাধীনভাবে সংবাদ পাবে না। তারা শুধু সেই খবরই দেখবে, যা কর্মকর্তারা দেখাতে চান। এটি প্রত্যেক আমেরিকানের জন্য উদ্বেগের বিষয়।”
প্রতিরক্ষা সচিবের কঠোর বার্তা প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ, যিনি আগে ফক্স নিউজে কাজ করতেন, সামাজিক মাধ্যম X-এ একটি পোস্টে এই নিয়মের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, “প্রেস পেন্টাগন চালায় না—জনগণ চালায়। সাংবাদিকদের আর পেন্টাগনের হলঘরে অবাধে ঘোরাফেরার অনুমতি নেই। ব্যাজ পরুন, নিয়ম মানুন, নইলে বাড়ি ফিরে যান।”
এ বছর পেন্টাগন বেশ কয়েকটি সংবাদ সংস্থাকে বের করে দিয়েছে এবং সাংবাদিকদের উপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি এসকর্ট ছাড়া পেন্টাগনের বেশিরভাগ এলাকায় সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। অথচ আগের প্রশাসনগুলোতে সাংবাদিকরা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম কভার করতে এই এলাকায় প্রবেশাধিকার পেতেন।
বিব্রতকর ঘটনা হেগসেথের দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে পেন্টাগন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ে। দ্য আটলান্টিকের প্রধান সম্পাদক জেফ্রি গোল্ডবার্গ ভুলবশত একটি সিগন্যাল গ্রুপ চ্যাটে যুক্ত হয়ে পড়েন, যেখানে হেগসেথ ইয়েমেনে সামরিক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এই ভুলের দায় নিয়ে অন্য পদে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এছাড়া, নিউ ইয়র্ক টাইমসে ফাঁস হওয়া খবরে জানা যায়, চীনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন সামরিক পরিকল্পনা সম্পর্কে ধনকুবের এলন মাস্ককে ব্রিফিং দেওয়ার কথা ছিল। ট্রাম্পের নির্দেশে সেই ব্রিফিং বাতিল হয়, এবং এই খবর ফাঁসের তদন্তে হেগসেথ পেন্টাগনের দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেন।
গণমাধ্যমের প্রতিবাদ শনিবার সোসাইটি অফ প্রফেশনাল জার্নালিস্টস এই পদক্ষেপকে “উদ্বেগজনক” বলে সমালোচনা করে। তারা বলেছে, “এই নীতি সরকারি সেন্সরশিপের দিকে একটি বিপজ্জনক পদক্ষেপ। নিরাপত্তার নামে সংবাদমাধ্যমকে চুপ করানোর চেষ্টা স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে সরকারের ক্রমবর্ধমান বৈরিতার একটি অংশ।”
দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের নির্বাহী সম্পাদক ম্যাট মারে একটি কলামে বলেছেন, “এই নীতি আমেরিকান জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে। সংবিধান সরকারি কর্মকর্তাদের কার্যক্রমের সংবাদ প্রকাশের অধিকার রক্ষা করে। সরকারের তথ্য নিয়ন্ত্রণ ও প্রবেশাধিকার বন্ধের যেকোনো চেষ্টা প্রথম সংশোধনী এবং জনস্বার্থের পরিপন্থী।”
তথ্যসূত্র: AP